মহামারী-করোনা-ভাইরাস-রচনা

বার্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের একটি সম্ভাব্য প্রশ্ন করোনা ভাইরাস রচনা। আজকের এই পোস্ট মহামারী করোনা ভাইরাস রচনা সম্পর্কে আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে দেখে নিই মহামারী করোনা ভাইরাস রচনা।

মহামারী-করোনা-ভাইরাস-রচনা

 

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বের একটি মহা আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯। সভ্যতার সাথে সাথে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে আবিষ্কার করেছে আধুনিক বিজ্ঞান ও অত্যধুনিক প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনে এনে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। মানুষ যেভাবে উদ্ভাবন করছে অধুনিক থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, তেমনি ভাবে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। কখনো বন্যা, খরা বা ভুমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ,  কোন মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার ভয়ে দিন কাটে অতঙ্কে-সংকটে। আবার কখনও কখনও আঘাত এনেছে বিভিন্ন মহামারী। বিশ্বব্যাপি প্রাণঘাতী মহামারীর নতুন নাম করোনা ভাইরাস সংক্রামক রোগ কোভিড-১৯।

করোনা ভাইরাস ও কোভিড-১৯ কি

সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ রোগ বিস্তারকারী ভাইরাস “করোনা ভাইরাস”। যা আমাদের কাছে কোভিড-১৯, করোনা রোগ বা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। করোনা ভাইরাস হল ভাইরাসের বড় পরিবার। মূলত করোনা ভাইরাস প্রথিবীতে নতুন নয়। মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় ১৯৬০ সালে এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে ৫ প্রকারের করোনা ভাইরাস আকিষ্কৃত হয়। ২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে প্রথম এক নতুন প্রজাতির করোনা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় । বিশেষজ্ঞরা এর দেয় নোভেল করোনা ভাইরাস । মূলত এই প্রজাতির করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতি রোগ কোভিড-১৯ সৃষ্টি করে। মারাত্মক ছোঁয়াচে নোভেল করোনা ভাইরাস খুব সহজেই অক্রান্তু ব্যক্তির শরীর থেকে অন্যব্যক্তির শরীরে বিস্তার করতে পারে। এজন্য কোভিড-১৯ খুব দ্রুত   সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং মারাত্মক মহামারী আকার ধারণ করে।

করোনা ভাইরাসের উৎস

করোনা ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে সারাবিশ্বে আজও বিতর্ক বিদ্যমান। অনেক বিশেষজ্ঞরা ধারণা নোভেল করোনা ভাইরাস/কোভিড-১৯ কৃত্রিম উপায়ে গভেষণাগারে তৈরী আবার অনেকের ধারণা কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের উৎস হল বাদুড়। প্রথম বাদুড় থেকে মানুষের শরীতে সংক্রমিত হয় কোভিড-১৯। তবে এ ব্যাপারে কেউ একমত পেষণ করে পারেনি।
বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসম্বের মাসে চীনের উহান শহরের একটি মাংসের বাজার থেকে সর্বপ্রথম মানুষের শরীরে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এবং ধাপে ধাপে তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারী আকার ধারণ করে।

করোনা ভাইরাসের নামকরণ

“করোনা” এবং “ভাইরাস” দুটি শব্দই ল্যাটিন ভাষা। ল্যাটিন “করোনা” এর বাংলা অর্থ “মুকুত” এবং “ভাইরাস” শব্দের অর্থ হল একপ্রকার অকোষীয় ক্ষুদ্র অনুজীব যা অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায় না। মূলত এই ভাইরাসের নাম করোনা হওযার মূল কারন এর আকার। এই ভাইরাসের শরীতে অসংখ্য খাজকাটা কন্টক থাকে যা আপাতদৃষ্টিতে অনেকটা রাজমুকুটের মত দেখতে। অন্যান্য ভাইরাস থেকে করোনা ভাইরাস এর আকার তুলনামূলক বড় হয়ে থাকে।

করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত ব্যক্তির লক্ষণ

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। করোনা ভাইরাস প্রথমে ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি, জ্বর, গলাব্যাথা দিয়েই কোভিড-১৯ এর উপসর্গ শুরু হয়। এবং পরবর্তীতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী,  একজন মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস ইনকিউবেশন ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং অনেক গভেষকদের মতে তা ২৪ দিন পর্যন্তও হতে পারে।

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ

  • শর্দি, কাশি, জ্বর
  • গলাব্যাথা, মাথাব্যাথা
  • হাঁচি,অবসাদ
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • মুখ ও নাকের স্বাদ হারিয়ে যাওয়া
  • পায়ের পাতায় র্যাস হওয়া
  • হঠাৎই অচেতন হয়ে পড়ে
  • শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
  • কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ

কি কি ভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে সে ব্যাপারে বড় বড় ডাক্তার সহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ এখনও সম্পূর্ন নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত।  প্রথম পর্যায়ঃ এমন কোন মানুষ যে বিশেষভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কোন অঞ্চল থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়ে এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ঃ সংক্রমিত হওয়া বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যন্য মানুষদের সংক্রমণ ঘটায়। তৃতীয় পর্যায়ঃ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর এলাকা জুড়ে। চতুর্থ পর্যায়ঃ সরাসরি সংস্পর্শে না আসা ব্যক্তি পারিপার্শিক পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হয়। এজন্যই মূলত সংক্রমিত এলাকা লকডাউন করা হয়।

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা

করোনা ভাইরাস সুস্থ মানুষের তুলনায় অসুস্থ মানুষের শরীরে খুব সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা, মানুষের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবকেই করোনা ভাইরাসে অক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয় নি।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের উপসর্গ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ প্রয়োগ করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যা মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী করে। আর এর চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে সম্পূর্ন আইসোলেশনে রাখা হয়।

করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা

যেহেতু, কোভিড-১৯ এর এখনও পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তাই এই ভাইরাসে থেকে বাঁচার উপায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন এবং টিকাকরন। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবহার গুলো হলঃ
  • মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কমপক্ষে ৩ ফুট ‍দূরত্ব বজায় রাখা।
  • মাস্ক ব্যবহার করা। বিশেষ করে বাড়ির বাইরে গেলে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করা।
  • কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ড-স্যানিটাইজার বা সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করা।
  • সংক্রমণ চলাকালীন সময়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাইরে না যাওয়া।

করোনা ভাইরাসের টিকা

বিশ্বব্যাপি দীর্ঘ গভেষণার পর বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গভেষক সর্বপ্রথম করোনার ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাস এর টিকা আবিষ্কার করেন। এক নজরে করোনা ভাইরাসের টিকা সমূহঃ
টিকার নাম আবিষ্কারক দেশ
ফাইজার-বায়োএনটেক কোভিড-১৯ টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র / জার্মানি
মডার্না কোভিড-১৯ টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এইচজিসি০১৯ ভারত / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাইকোভ-ডি ভারত
স্পুটনিক ভি কেভিড-১৯ টিকা রাশিয়া
কোভিশিল্ড যুক্তরাজ্য
জনসন অ্যান্ড জনসন কোভিড-১৯ টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র / নেদারল্যান্ডস / বেলজিয়াম
কনভিডেসিয়া চীন
বিবিভি১৫৪ ভারত
সিনোফর্ম বিবিআইবিপি-কর্ভি কোভিড-১৯ টিকা চীন
করোনাভ্যাক চীন
কোভাক্সিন ভারত
নোভাভ্যাক্স কেভিড-১৯ টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র / নরওয়ে / ভারত
কর্বেভ্যাক্স ভারত / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

 

বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের প্রভাব

বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাস স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং যোগযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমিত এলাকা/ শহর/ দেশ লকডাউন ঘোষণা করার কারনে অনেক ছোট বা মাঝারী ধরণের শিল্প ও ব্যবসা বানিজ্য অস্তিত্ব হারিয়েছে। ফলে অসংখ্য মানুষের জীবন-জিবিকা হুমকির মুখে। বিশ্বজুড়ে বিপুল হারে বেড়েছে বেকারত্বের হার। সংকটে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। সমাজের বুকে দেখা দিয়েছে দরিদ্র, অনাহার, খাদ্যাভাব। অন্যদিকে মানুষ দেখছে প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত্যুর মিছিল। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্রমশ বেড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিকাঠামোর দূরাবস্থা। অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে বিনা চিকিৎসায়।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গৃহীত বৈশ্বিক পদক্ষেপ

করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বে ব্যাপক ভয়াবহ সংকটের সৃষ্টি করেছে। যা মোবাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ এবং সংক্রমিত অঞ্চল লকডাউন, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা সহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ কো মহামারী ঘোষণা করে স্বাস্থ বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

করোনা পরবর্তী নতুন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়

করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাপি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে বেকারত্বর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা, করোনা পরবর্তী বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। দারিদ্র, বেকারক্ত, খাদ্য নিরাপত্তা আরও ঘনীভূত হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে না পড়ে এজন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সঠিক পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।

উপসংহার

মহামারী করোনা ভাইরাস থমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। বিশ্বকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আমাদের সবাকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং যতদূর এবং যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে করোনা টিকাকরণ-এর আওতায় আনতে হবে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়াতে সরকারকে সঠিকভাবে সল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

পরিশেষে,

এই ছিল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ সম্পর্কে রচনা। আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে। মহামারী করোনা ভাইরাস রচনা সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে বা আপনার কার কাছে আরও কোন পয়েন্ট এড করার আইডিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।

By Moral

আরও পোস্ট দেখুন

2 thoughts on “মহামারী করোনা ভাইরাস | কোভিড-১৯ বাংলা রচনা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Tish Cyrus Says Yes to Love Again with Dominic Purcell’s Proposal! Harry Kane Scores Brilliant Solo Goal, Spurs Fight Back Against Opponents Salah’s Scoring Streak: Liverpool Star Matches Suarez’s Home Record January 5 | Famous people’s birthday Today!