আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করতে চলেছে ?

বিজ্ঞানও প্রযুক্তির এই যুগে বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা রোবট  আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কেমন হবে  যদি কম্পিউটার বা রোবট মানুষের মত ভাবতে শুরু করে? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে এটাই কোন রোবট বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা মানুষের মত চিন্তা ভাবনা করতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রোবট এমনও কিছু জটিল কাজ কর সক্ষম যা মানুষও করতে পারে না। চলুল বিস্তারিত জেনে নিইঃআর্টিফিশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স

আরও পড়ুনঃ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যাখ্যা যদি সহজভাবে বলতে হয় তাহলে বলবো মানুষের চিন্তাভাবনা কে কৃত্রিম ভাবে কম্পিউটার বা কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রের মাধ্যমে রূপ দেওয়ার ব্যবস্থা।  অর্থাৎ এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একটি যন্ত্র মানুষের মত চিন্তা করতে পারবে। যাকে বলা যায় ভার্চুয়াল হিউম্যান ব্রেইন। এক কথায় বলতে গেলে, মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা মেশিন তৈরীর সাইন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিংই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স- এর প্রকারভেদ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে আরো কাছ থেকে বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই এর প্রকারভেদ অর্থাৎ একে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে তা জানতে হবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো ১.উইক এআই, ২.স্ট্রং এআই, ২.সিংগুলারিটি এআই

১.উইক এআইঃ উইক এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু কাজ করবে।যদি আপনি বুঝে না থাকেন তাহলে আপনাকে একটি খুব সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি যেই ইউটিউব অ্যাপস টি ব্যাবহার করে ভিডিও দেখেন এটি হচ্ছে মূলত উইক এআই। অর্থাৎ ইউটিউব অ্যাপস টি দিয়ে আপনি শুধুমাত্র ভিডিও দেখার মত নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারবেন।

২.স্ট্রং এআইঃ .স্ট্রং এআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স  মেশিনকে মানুষের মতো ভাবতে সাহায্য করবে। এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে। তাহলে একবার ভেবে দেখুন যেই প্রযুক্তি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে প্রযুক্তি কতটা এগিয়ে।

৩.সিঙ্গুলিরিটি এআইঃ সিঙ্গুলিরিটি এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত আরো অত্যাধুনিক। এটি মেশিন কে মানুষের থেকে বেশি ভাবতে সাহায্য করবে। একটি মেশিন যদি মানুষের থেকে বেশি ভাবতে পারে তাহলে তা মানুষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ও চিন্তিত কারণ এটি পরবর্তীতে মানুষের কমান্ড আদৌ কি মানবে।যদিও এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গুলো সবই উইক এআই। তবে যদি কোনো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্ট্রং এ আই পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে তাহলে সিংগুলারিটি এ আই পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশি সময় নিবে নাহ কারণ স্ট্রং এআই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে তাই এটি মানুষের মতো কাজ করবে। এরপর যদি সিংগুলারিটি এআই চলে আসে তাহলে সেক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল সিস্টেম গুলো নিজের একটি ক্লোন তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হবে।  মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিকে যেই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে । হয়ত আর বেশিদিন বাকি নেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অত্যাধুনিক রূপ দেখতে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উদ্ভাবন

আমরা হয়ত সবাই ভাবি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্প্রতি কয়েক বছরেই আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু আপনি হয়ত জানলে অবাক হবেন, এই আলোচনা শুরু হয় কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ারও আগে । সর্বপ্রথম ১৯২০ সালে “রুমন্স ইউনিভার্সাল রোবটস” নামের একটি সাইন্স ফিকশন বই থেকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা পাওয়া যায়।  নানাবিধ গবেষণা তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে। তবে আমাদের এই সভ্য জগতে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর যাত্রা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। একজন ইংরেজ গণিতবিদ যার নাম এলেন টুরিং সর্বপ্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বক্তব্য দেন ।

এবার আসুন জেনে নিই কেনো এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে এত আলোচনা সমালোচনা?

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

বেশি দূরে যেতে হবে নাহ আমাদের বর্তমানের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের পৃথিবীতে আস্তে আস্তে কতটা রাজত্ব করছে। আমরা একটি কম্পিউটার দিয়ে চাইলে কি না করে ফেলতে পারি। তাই তো আমরা এই কম্পিউটার কে সবথেকে বুদ্ধিমান ভাবী। তবে সত্যি কথা এই যে কম্পিউটার শুধু মাত্র একটি বোকা বাক্স। যাকে নিয়ন্ত্রণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অর্থাৎ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি কমান্ড দিয়ে কম্পিউটার চলে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে প্রয়োগ করার জন্য JAVA, LISP, PROLOG এর মত  বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।যেখানে কম্পিউটার এই প্রযুক্তির উপর নির্ভর সেখানে হয়ত ঢালাও ভাবে বলতে হবে নাহ যে আমরা এখনো কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর কিনা।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের থেকেও বেশি বুদ্ধি মত্তা

এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষ দ্বারা তৈরি হলেও এটি মাঝে মাঝে মানুষকেও ছাড়িয়ে যায়। হ্যা, বিশ্বাস করতে কষ্ট সাধ্য হলেও এটিই সত্যি। আইবিএম এর ডীপ ব্লু নামের একটি যন্ত্র যা ছিল বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্র। যা তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু গেরি কেসপাভ কে পরাজিত করে। বিশ্বের প্রথম তৈরিকৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্র যদি একজন দক্ষ মানুষকে হার মানিয়ে দিতে পারে তাহলে তো এটা সুনিশ্চিত যে ভবিষ্যতে আমরা সকলে এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উপরে  কতটা নির্ভরশীল হয়ে থাকবো।এখানেই শেষ নয়, ২০১০ সালে গুগলের আলফাগো গো খেলায় বিশ্বচ্যামপিয়নকে ৫ বারের মধ্যে ৪ বারই হারিয়ে দেই।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করতে চলেছে

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, ভবিষ্যতে মানুষের কর্মক্ষেত্রের বেশিরভাগ জায়গা রোবোটিক্স দখলে নিয়ে নিবে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পত্রিকা ফরচুনের তথ্য মতে ৫০০ নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছে। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতটা স্মার্ট যে সে আপনি সারাদিন গুগলে কি সার্চ করেন কি ব্রাউজ করেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার পছন্দ অপছন্দের বেপারটি খোঁজে বের করে আপনাকে একটি কোম্পানিতে নিয়োগ প্রদান করবে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক বড় বড় কারখানা থেকে শুরু করে , যুদ্ধক্ষেত্রে ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার হয়ে থাকে। আমরা এতোদিনে হয়ত ড্রোনের নাম শুনেছি। এই ড্রোন নিমিষে একটি দেশের রাডার ফাঁকি দিয়ে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসতে পারে। অথচ এই ড্রোন চালাতে কোনো পাইলটের প্রয়োজন হয়না। এটি নিজে থেকে নিজের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে ব্যাবহার করে খুব দক্ষতার সাথে কাজ সেরে আসতে পারে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে আলোচনার সময় আপনার মাথায় অবশ্যই এই ভাবনাটি অবশ্যই আসবে যে এটি আসলে কিভাবে কাজ করে। যেহেতু আগেও বলা হয়েছে যে এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত সকল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উইক এআই তাই একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম কে রান করানোর জন্য এর মধ্যে প্রায় সব ধরনের তথ্য ও প্রোগ্রাম ইনপুট করে দেওয়া হয়। যা অনুযায়ী এটি কাজ করবে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি গুণ হচ্ছে এটি নিজের অবস্থান থেকে নিজে ইমপ্রুভ করতে পারে তার অতীতে করা ভুল সুধরে নিয়ে। এর একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কম্পিউটারে দাবা খেলা। যেখানে কম্পিউটার একবার হেরে গেলে এটি পরবর্তীতে যেই কারণে বা যেই চাল টা দেওয়ার কারনে হেরে যায় তা চিহ্নিত করে এবং পরবর্তীতে খেলার সময় সেই ভুলটি আর করে নাহ এবং নতুন কিছু চেষ্টা করে। এভাবে এই প্রযুক্তিতে ধীরে ধীরে নিজের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে তুখোড় হয়ে উঠে। এইখানেই মানুষ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে পার্থক্য গড়ে উঠে।যেখানে মানুষ কোনো ভুল করলে তা সুধরে নিতে পারলেও পরবর্তীতে সেই ভুল আবারও করতে পারে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ক্ষেত্রে এটি ঘটে নাহ। মানুষ যেখানে ভুলে ভরা প্রযুক্তি সেখানে স্মার্ট। তাই তো চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় যে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ এর নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখে।

একদিকে এই প্রযুক্তি  অপার সম্ভাবনার আঁধার হলেও অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয়। তারপরেও এই প্রগতিশীল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই এই সম্ভবনা ময় প্রযুক্তির সাহায্য আমাদের নিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট-এর বিপদজনক দিকটি উপেক্ষা করে ভালোদিকের দিকে নজর বাড়ালে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন আলোকিত করবে। অর্থাৎ এটি এমন অবস্থানে পৌঁছাতে পারে যে এটি ছাড়া মানুষের পা বাড়াতে কষ্টসাধ্য হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top