ই-টিন কী? টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম ২০২৪

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (জারাবো) করদাতা হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-টিআইএন করদাতা হিসাবে (e-TIN) রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। ই-টিন সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলঃ

ই-টিন কী? টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম ২০২২
ই-টিন কী? টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম ২০২২

 

ই-টিন কী?

টিন ( Taxpayer Identification Numbers) একটি ১২ সংখ্যার বিশেষ নম্বর বা বিশিষ্ট সার্টিফিকেট যা দিয়ে করদাতাকে শনাক্ত করা হয়। এটি সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর অফিস প্রদান করে থাকে। কর প্রদান করতে গেলে এটির প্রয়োজন হয়। কর প্রদান ছাড়াও আরো অনেক কাজে টিন এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর ই-টিন হলো আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ। এর মাধ্যমে অনেক সহজ উপায়ে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং টিন সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। ই-টিন নিতে কোনো টাকা লাগে না। কোনো ফি দিতে হয় না। আপনি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ই-টিন নিতে পারবেন।

ই-টিন কি কাজে ব্যবহৃত হয় ?

  • বিভাগীয় জেলা শহর বা পৌরসভা ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য বা নবায়ন করার জন্য।
  • কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন এর জন্য।
  • আমদানি করার ক্ষেত্রে আমদানি পত্র রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
  • জমি বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
  • ড্রাগ লাইসেন্স এর জন্য।
  • ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে।
  • আইএসডি টেলিফোন সংযোগের জন্য।
  • বিবাহনামা ও তালাকের রেজিস্ট্রেশন এর জন্য।
  • ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত যেকোন দরপত্রের জন্য।
  • যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন এর জন্য।
  • যানবাহনের মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস সার্টিফিকেট এর জন্য।
  • কোন কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের জন্য।
  • কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে।
  • ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য পদ পেতে বা নবায়ন করার জন্য।
  • বীমা তালিকাভুক্তকরণ অথবা লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য।

ই-টিন এর সুবিধা

  • ই-টিন গ্রহণকারী হিসেবে আপনি যে সকল সুবিধা পাবেন তা হলঃ
  • আপনি একজন ট্যাক্স প্রদানকারী হিসেবে সরকারি খাতায় নিবন্ধিত হবেন।
  • ঘরে বসেই অনলাইনে ই-টিন  সার্টিফিকেট পেতে পারবেন
  • কর-সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আপনি নিজেই সহজে জানতে পারবেন।
  • আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট থাকলে প্রতিপক্ষ যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয় আপনি তার বিপক্ষে আবেদন করতে পারবেন।
  • সুবিধাজনক স্থান ও সময় এ রেজিস্ট্রেশন রি-রেজিস্ট্রেশন করে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন।
  • ই-টিন সার্টিফিকেট বদৌলতে ব্যাংক আপনার সঞ্চিত অর্থের 10% কর কাটবে।  কিন্তু যদি আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট না থাকে তবে 15% কর কাটবে।
  • ই-টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাউচার প্রদান করা হবে।
  • আপনার যদি ই-টিন সার্টিফিকেট থাকে তাহলে টিন-সংক্রান্ত যথাযথ নীতিমালা থাকায় আপনি আশঙ্কামুক্ত থাকবেন। স্বচছ ও সুন্দর এই ব্যবস্থাপনা পুরো দেশকে আরো কর বান্ধব করে দিয়েছে।

ই-টিন গ্রাহকের বাধ্যবাধকতা

ই টিন গ্রাহকের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। এগুলো হলোঃ

  • আপনাকে অবশ্যই একজন ই-টিন গ্রহণকারী হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত আয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
  • আপনাকে সম্পত্তি এবং দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
  • ই-টিন এ রেজিস্ট্রেশন করার সময় অবশ্যই সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে হবে।
  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে।
  • যেহেতু ব্যবসায়ীক কাজে ই-টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে সেহেতু অবশ্যই ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
  • আপনার আয় দুই লাখ টাকার ওপরে হলে আপনাকে সরকারি খাতে আপনার আয়ের চতুর্থাংশের এক ভাগ অগ্রিম কর প্রদান করতে হবে।
  • আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট অনুমোদন, চুক্তিনামা হিসাবসংক্রান্ত তথ্য আইন অনুযায়ী হবে।

যারা ই-টিন গ্রাহক তাদের রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক কি?

  • যদি আপনার আয় মাসে ১৬ হাজার এর সমান হয় তাহলে আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট নিতে হবে ও রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আয়কর জমা দিতে হবে না।
  • আপনার আয় যদি কর সীমার নিচে থাকে তাহলে আপনাকে ই-টিন সার্টিফিকেট দেখিয়ে শূন্য বিবরণী জমা দিতে হবে। আর যদি আপনি এইক্ষেত্রে আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান তাহলে কমপক্ষে তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয়কর দিতে হবে না। আর তৃতীয় বছর সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হবে।
  • যে সকল ক্ষেত্রে ই-টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় সেই সকল ক্ষেত্রের জন্য (করযোগ্য আয় না থাকলেও) আপনাকে ই-টিন সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে এবং অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট করার নিয়মঃ

নতুন পদ্ধতিতে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের শুরুতে প্রত্যেককে অবশ্যই অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরীর নিয়মঃ

  •   www.incometax.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করবেন।
  • যা আপনাকে একটি হোমপেজে নিয়ে যাবে। হোমপেজের Register বাটনে কিল্ক করলে “রেজিস্ট্রেশন” ফরম ওপেন হবে। ফরমের নির্ধারিত শূন্যস্থানগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ শেষে Register বাটনে কিল্ক করুন ।
  • ফরমে প্রদানকৃত ফোন নম্বরে তাৎক্ষণিকভাবে একটি OTP কোড পৌছে যাবে। তারপরে প্রদর্শিত ডায়ালগ বক্সে ফোনে প্রেরণকৃত কোডটি প্রদান করুন। এবার Active বাটনে ক্লিক করলেই পর্দায় দেখতে পাবেন “Welcome to Taxpayer’s Identification Number (TIN) Registration/Re-registration”
  • বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য ই-টিন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের নিয়মঃ বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য ই-টিন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের নিয়মাবলীগুলো হলঃ
  • TIN Application মেনুতে ক্লিক করুন । এবার Registration/Re-registration ফরমে প্রদর্শিত শূন্যস্থানগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে Go to Next এ ক্লিক করুন।
  • Basic Information ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে শূন্যস্থানগুলো পূরণ করুন এবং Go to Next ক্লিক করুন।
  • Final Preview তে ফরমে প্রদর্শিত আপনার তথ্যগুলো সঠিক আছে কি না, তা শেষবারের মতো যাচাই করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে Final Preview এর নীচে চেক বক্সে টিক চিহ্ন দিন।
  • এরপর Submit Application বাটনে ক্লিক করলেই রেজিস্ট্রেশন /রি-রেজিস্ট্রেশনকারী, নতুন ১২ ডিজিটের ই-টিন পাবেন। তবে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচিতি নম্বর নেই এবং যিনি পাসপোর্টের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং রি-রেজিস্ট্রেশন করতে চান, তিনি একটি Ticket পাবেন। Ticket প্রিন্ট করে তাতে উল্লিখিত নিয়ম অনুসরণ করে বর্ণিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে।

সাবধানতাঃ

আপনাকে ই-টিন সংগ্রহের ব্যাপারে অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  যথাঃ

  • একটি মাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে একটি ই-টিন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • তথ্য প্রদানে যাতে কোনো ভুল না হয় সে জন্য বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
  • যদি জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট দুটিই থাকে তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে ই-টিনের জন্য আবেদন করতে হবে। কেউ যদি দুটি দিয়েই ই-টিনের জন্য আবেদন করে তবে সেটা বেআইনী ও আইনগত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
  • ই-টিন সার্টিফিকেট নেওয়ার পরে আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল পূরণ করে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। যদি না দেন তাহলে আপনার ইনকাম কালো টাকা হিসেবে গণ্য করা হবে।
  • ই-টিনধারী অনেকেই বছরের পর বছর ই-টিন সনদ নিয়েই তাদের কাজ মিটিয়ে ফেলে কিন্তু কোন প্রকার রিটার্ন দাখিল করে না। ফলে প্রতিবছর সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এর জন্য আপনারা অবশ্যই উচিত সময়মতো রিটার্ন দাখিল করা।

অর্থাৎ ই-টিন  আপনার কর প্রদানকে একদম সহজতর করে তুলেছে। এখন আপনি সহজেই ঘরে বসেই অনলাইনেই ই-টিন সংগ্রহ করতে পারবেন এবং  নিজের সময় বাঁচাতে পারবেন।

1 thought on “ই-টিন কী? টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম ২০২৪”

  1. I was looking for an appropriate clarification for e tin registration review. I much appreciate, administrator, for sharing such awesome substance on this theme. Presently I have all I require about it. Here’s another enlightening substance for E Tin Registration , you will get well-informed data about it here.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top