বিটকয়েন কি ? বিটকয়েন এর সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

যদি আপনি বিটকয়েন কি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে থাকেন, তাহলে এই লেখাটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। বলুন তো মানুষের জীবনের সবচাইতে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কি? ঠিক ধরেছেন! টাকা বা অর্থ। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে এই টাকা-পয়সা বা অর্থের ধরনের এসেছে পরিবর্তন৷ বর্তমানে বিটকয়েন নামের একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে অনেকেই লেনদেন করছেন।  আজকের লেখায় আমি আপনাদেরকে জানাবো বিটকয়েন কি এবং বিটকয়েন এর সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে।

বিটকয়েন কি
বিটকয়েন কি

বিটকয়েন কি? 

চলুন সবার আগে জেনে ফেলা যাক বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে। এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য, একটু ভালো ভাবে জীবন যাপন করার জন্য অথবা নিজের পছন্দের কোন কিছু কেনার জন্য, যে কারণেই বলি না কেন, টাকাপয়সা কিন্তু অনেক বেশি প্রয়োজন। সাধারণত একটি দেশে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে যে অর্থ ব্যবহার করে সেটি সে দেশের ব্যাংক দ্বারা সবার হাতে পৌঁছায়। 

অর্থাৎ কোন দেশে কোন মুদ্রা প্রচলন এবং সেটি বিতরনের সম্পূর্ণ কাজটি ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে৷  কিছু বছর আগেও ডিজিটাল মুদ্রা যে হতে পারে এটি মানুষের ধারনার বাইরে ছিল।  কিন্তু বিটকয়েনের আগমনের ফলে মানুষ এখন এই ডিজিটাল মুদ্রা দিয়ে লেনদেন করে, যেটি কোন ব্যাংক প্রণয়ন করে না। 

তাহলে বিটকয়েন কি? বিটকয়েন হচ্ছে সহজ বাংলায় এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি।  আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি আবার কি?  ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে ব্লকচেইন টেকনোলজি বেইজড একপ্রকার কারেন্সি  যেটি ব্যাংকের পরিবর্তে বিভিন্ন জটিল অ্যালগরিদম, ব্লক  ক্রিপ্টোগ্রাফি সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।  সুতরাং বুঝতেই পারছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের স্পেশাল কারেন্সি। এটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই কারেন্সিতে লেনদেন করার জন্য  আপনাকে নির্দিষ্ট কোন জিওগ্রাফিক্যাল এরিয়া তে থাকতে হবে না। 

কেননা এই কারেন্সিতে লেনদেন করার জন্য বেছে নেয়া হয় অনলাইনের নেটওয়ার্ক।  অনলাইনের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয় বলে গোটা পৃথিবীতে ক্রিপ্টোকারেন্সির যথেষ্ট কদর রয়েছে।  বিটকয়েন হচ্ছে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ভ্যারিয়েন্ট৷  বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে এবং বিটকয়েন লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে বর্তমানে এটি নিয়ে সবার মধ্যে কম বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

বিটকয়েনের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য

বিটকয়েন কি সেটি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আরেকটু পরিষ্কার করার জন্য এখন আমি বিটকয়েন সম্পর্কে আরো কিছু ধারনা দেবো। শুরুতেই আসা যাক বিটকয়েনের ইতিহাস নিয়ে।  বিট কয়েনের ইতিহাস কিন্তু খুব বেশিদিনের নয়। প্রায় ১৩ বছর আগে থেকেই বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলের শুরু।  সাতোশি নাকামোতো নামের একজন অজ্ঞাতনামা মানুষ অথবা দলের মাধ্যমে ২০০৮ সালে  একটি অনলাইন পেপারে সর্বপ্রথম বিটকয়েন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা হয় এবং তা সবার নজরে আসে।  তারপর ২০০৯ সাল থেকে  পুরোদমে বিটকয়েনের লেনদেন শুরু হয়।  এটি মূলত বিটকয়েনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। 

এবার আসা যাক বিটকয়েন এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে। বিট কয়েনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন করা হয় বলে আপনাকে বিটকয়েনে লেনদেন করার জন্য কোনরকম ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড  ইউজ করতে হবে না৷ তবে এটুকু দেখেই আবার বিটকয়েনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাবেন না, কারণ বিটকয়েনের প্রতিটি লেনদেনই  বিটকয়েনের যে ব্লকচেইন রয়েছে সেটিতে রেকর্ডেড থাকে। 

বিটকয়েনের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো একটি বিট কয়েনের মূল্য ফিক্সড নয়। অর্থাৎ সময়ের সাথে বিট কয়েনের মূল্য ওঠানামা করে থাকে।  বিটকয়েনের সবচাইতে ক্ষুদ্রতম অংশকে সাতোশি বলা হয়। প্রতিটি বিটকয়েনে ১০০ মিলিয়ন এর মতন সাতোশি রয়েছে।  এগুলোর পাশাপাশি বিটকয়েনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হচ্ছে আমাদের পৃথিবীতে কিন্তু বিটকয়েনের সংখ্যা অসংখ্য নয়।  এখনকার হিসাব মতে পৃথিবীতে প্রায় ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন বিদ্যমান রয়েছে।  এগুলোই হচ্ছে বিটকয়েনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য। আশা করছি এখন বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে আপনাদের আর কোনো সন্দেহ নেই। 

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে

বিটকয়েন কি সেটি তো জেনে ফেললেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে বিটকয়েন কাজ করে।  বিটকয়েন কাজ করার জন্য কোন ব্যাংক, ডেবিট -ক্রেডিট কার্ড অথবা পেমেন্ট মেথড এর প্রয়োজন হয় না। কারণ বিটকয়েন কাজ করে ব্লকচেইন টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে।  বিটকয়েনের কারা কে কখন কতটুকু লেনদেন করছেন সেটির হিসাব রাখার জন্য মাইনিং রিগ নামক একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার এর সাহায্য নেয়া হয়। এ পুরো লেনদেনের প্রক্রিয়াটির তত্ত্বাবধানে থাকেন এমন কিছু মানুষ যাদেরকে মাইনার নামে ডাকা হয়। মাইনাররা বিট কয়েনের বিনিময়ে কাজটি করে থাকেন।  সুতরাং যখন কেউ বিটকয়েনের লেনদেন করেন তখন সাথে সাথে সেই লেনদেনের সমস্ত তথ্য  কম্পিউটারে রেকর্ড হয়ে যায়।  এর ফলে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নিরাপদ থাকে এবং পরবর্তীতে কোনো চুরি-বাটপারির সুযোগ থাকে না।  এভাবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে বিটকয়েন কাজ করে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ

বিটকয়েন এর সুবিধা ও অসুবিধা

বিটকয়েন কি সেটি যারা ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছেন, তারা এখন নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন যে বিটকয়েন এর সুবিধা ও অসুবিধা কি কি।  তাই চলুন জেনে নেয়া যাক বিটকয়েন এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। 

শুরুতেই আসি বিটকয়েন এর সুবিধা নিয়ে।  বিটকয়েনের মূল সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে লেনদেন করতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার কোন প্রয়োজন নেই। সাধারণত আপনি যদি টাকা-পয়সার লেনদেন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগবে অথবা ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড লাগবে। আবার যদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে চান, তাহলে সেই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ গুলোতেও আপনাকে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। একাউন্টগুলো ক্রিয়েট করা সাধারণত অনেক বেশি সময় সাপেক্ষ হয়। পাশাপাশি এগুলো ক্রিয়েট করার জন্য বিভিন্ন রকম ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হয়৷ কিন্তু বিটকয়েনে এগুলোর কোন ঝামেলা নেই। কারণ বিটকয়েন কিন্তু কোন ব্যাংক ভিত্তিক কারেন্সি নয়। তাই যদি আপনি বিটকয়েনের লেনদেন করতে ইন্টারেস্টেড হন এবং আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকে, তাহলেই আপনি লেনদেন করতে পারবেন। 

বিটকয়েনের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এখানে লেনদেন করতে অন্যান্য পেমেন্ট সিস্টেম এর মত এক্সট্রা চার্জ লাগবে না। যদি আপনি পেপাল কিংবা পেওনিয়ার ইত্যাদি পেমেন্ট মেথড ইউজ করে অন্যান্য দেশ থেকে টাকা নিজের একাউন্টে আনতে চান,  তাহলে কিন্তু আপনাকে বেশ কিছু টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে গুনতে হবে, যেটি বিটকয়েনে করতে হয়না।  উপরন্তু আপনি তুলনামূলক অনেক কম সময়ে  বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, বিটকয়েনের মাধ্যমে আপনার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন। পাশাপাশি বিটকয়েনের নিরাপত্তা বেশ ভালো।

বিটকয়েনের সুবিধা হিসেবে আমি আরো বলতে চাই বিটকয়েনের মাধ্যমে আয় করার খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।  যারা বিটকয়েন মাইনিং করে থাকেন,  তারা মাইনিং এর মাধ্যমে কিন্তু বেশ ভালো পরিমাণ উপার্জন করে থাকেন।  এছাড়া অনেকেই রয়েছেন যারা বিটকয়েন কে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখে থাকেন। অর্থাৎ তারা বিটকয়েন যে মূল্যে কেনেন সেটিকে পরবর্তীতে আরো বেশি দামে সেল করার মাধ্যমে প্রফিট অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে আয় করে থাকেন। পাশাপাশি বর্তমানে এমন অনেক ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন যেগুলোতে ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে পারিশ্রমিক হিসেবে বিটকয়েন দেয়া হয়।  সুতরাং যারা ঘরে বসে নিজের হাত খরচ টুকু আয় করতে চান, তারা এই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধ্যমে আয় করে থাকেন।

এবার আসা যাক বিটকয়েনের অসুবিধা নিয়ে। বিট কয়েনের একটি অসুবিধা হচ্ছে এখানে লেনদেন করার সময় আপনি চাইলে আপনার পরিচয় গোপন করে লেনদেন করতে পারবেন।  তাই যদি কখনো বেআইনিভাবে কোন লেনদেন হয়ে থাকে, তাহলে কে লেনদেনটি করেছেন সেটি ধরা সহজ নয়। 

শেষ কথা 

এটুকুই ছিল বিটকয়েন কি  এ সম্পর্কিত আজকের আলোচনা। আশা করি আপনাদেরকে বিটকয়েন সম্পর্কে অনেক কিছু জানাতে পেরেছি। যদি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে নিজেদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top